কেন বাঁহাতের অনামিকায় শোভা পায় অ্যাংগেজমেন্ট রিং?
বলুন তো, প্রেমিক প্রেমিকার কিংবা নববিবাহিত দম্পত্তির মধ্যকার ভালবাসার সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় কোন ঘটনাটির মধ্য দিয়ে? উমমম..মনে পড়ছে কি? আচ্ছা আমিই বলে দেই। চীনারা বিশ্বাস করে প্রতিটি প্রেমিক প্রেমিকা যুগল অথবা দম্পতির ভালবাসার শুরুটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয় বাম হাতের অনামিকায় পছন্দের আংটি পরানোর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে একটু ইতিহাস পাঠ করি- ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই হাতের ৪র্থ (অনামিকা) আঙ্গুলটি “ফিঙ্গার রিং” হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। তবে জেনে অবাক হবেন যে, পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু তখন বাম হাতের অনামিকায় রিং পড়ানো হতো না। স্পেন, পেরু, ভেনিজুয়েলা, নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং ভারতসহ আরো কিছু দেশে ডান হাতে এই এংগেজমেন্ট রিং পড়ানো হতো। এবং কিছু দেশে এখনো হয়। ভারতে বর্তমানে ডান হাতের পাশাপাশি বাম হাতেও রিং পড়ানোর প্রচলন আছে।যাই হোক, চীনাদের বিশ্বাস নিয়ে যা বলছিলাম, সে আলোচনাতেই ফিরে যাই। চীনারা বিশ্বাস করে যে, মানুষের হাতের পাচঁটি আঙ্গুল ৫টি সর্ম্পকের প্রতীক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির সাথে তার পরিবারের সম্পর্কের নিরূপক হলো এই পঞ্চ আঙ্গুল। এই বিশ্বাস মতে-১. বৃদ্ধাঙ্গুলি- বাবা মায়ের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্দেশ করে, ২. তর্জনী- ব্যক্তির সাথে তার ভাই বোনের সম্পর্ক বোঝায়, ৩. মধ্যমা- ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক অর্থাৎ আত্মসম্পর্কের নির্দেশক, ৪. অনামিকা- জীবনসঙ্গীর সাথে সম্পর্কের প্রতীকী রূপ, ৫. কণিষ্ঠা- ব্যক্তির সাথে তার সন্তানদের সম্পর্ক নির্দেশ করে।শুনে সম্ভবত মনে হচ্ছে কী সব যা তা বলে দিল লোকটা! এরকম তো আমরাও নিজেদের মতো করে বানিয়ে বলতে পারি! যত্তসব গাঁজাখুরি গপ্প!হ্যাঁ। তবে চীনারা বোধহয় আপনাদের মনের এই কথাটি পড়তে পেরেছিল। তাই চমৎকার মজার একটি পরীক্ষা করে তারা তাদের এই বিশ্বাসকে একটি তত্ত্বে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল। চলুন তবে এবার নিজে নিজেই এই পরীক্ষাটি করে দেখবেন-পরীক্ষা :ছবি দেখে প্রথমে আপনার দুই হাত সহাবস্থানে নিয়ে আসুন। হাততালি দেবার সময় দুহাত যেমন একে অন্যের মুখোমুখি থাকে ঠিক সেভাবে। অর্থাৎ ডান ও বা হাত পরস্পরমুখী করুন। দুটি হাত পরস্পর এমনভাবে স্পর্শ করান যেন, এক হাতের প্রত্যেকটি আঙ্গুল অপর হাতের প্রত্যেক আঙ্গুলের উপর প্রতিস্থাপনযোগ্য হয়। এক্ষেত্রে তর্জনী তর্জনীর উপর, বৃদ্ধাঙ্গুলী বৃদ্ধাঙ্গুলির উপর, কণিষ্ঠা কনিষ্ঠার উপর,মধ্যমা মধ্যমার উপর এবং অনামিকা অনামিকার উপর থাকবে। হাত ঠিক এই অবস্থাতে রেখেই আপনার দুই হাতের মধ্যমা আঙ্গুল বা মিডল ফিঙ্গার ভাঁজ করুন (হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করলে মধ্যমা আঙ্গুল যতটুকু ভাঁজ হয় ঠিক ততটুকু)। এখন ভাঁজ করা দুই হাতে মধ্যমা দুটিকে পরস্পরের সাথে আরও ভালভাবে স্পর্শ করান যেন এদের মধ্যে কোন ফাঁকা স্থান না থাকে।পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত:ভাঁজ করা মধ্যমা দুটি একে অন্যের সাথে লেগে থাকা অবস্থাতে আপনি ধারাবাহিকভাবে একটি একটি করে পরপর অন্যান্য আঙ্গুলগুলো আলাদা করার চেষ্টা করবেন। প্রথমে বৃদ্ধাগুলি দুটি আলাদা করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন খুব সহজেই আলাদা হয়ে যাবে। চীনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যার মানে দাঁড়াচ্ছে বাবা-মায়ের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক একটা বয়সে এসে ঠিকই শেষ হয়ে যাবে। তারা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন অজানায়। এরপর মধ্যমা দুটি একে অন্যের সাথে লেগে থাকা অবস্থাতে একে একে তর্জনী ও কণিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ট্রাই করুন আলাদা করতে। দেখবেন সহজেই আঙ্গুলগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ভাই-বোনেরাও একটা সময় তাদের নিজেদের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবার দরুণ দূরত্ব সৃষ্টি করবে। অনুরূপভাবে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদেরও বন্ধনেও একসময় ক্ষীণতা জন্মাবে। কিন্তু আপনি যখন মধ্যমাদ্বয় স্পর্শ করে থাকা অবস্থায় অনামিকা দুটি নিজেদের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করবেন, তখন আবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন যে, আপনি শত চেষ্টা করে জোর খাটিয়েও অনামিকা দুটিকে কোনভাবেই আলাদা করতে পারছেন না! আসলেই এদেরকে পৃথক করা সম্ভব হচ্ছে না! কী আশ্চর্য, তাই না?চীনাদের এই বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর এবং দৃঢ়তর সম্পর্কের প্রতীক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক। তাই যার সাথে এ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে হয় তার হাতের আনামিকায় পরিয়ে দিতে হয় এই ভালবাসার উপহার। যেন দুজনের এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় আজীবন।এবার আসা যাক বামহাত কেন পরানো হয় প্রসঙ্গে। বামহাতে অনামিকায় রিং পড়া নিয়েও মজার একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে গ্রীক এবং ল্যাটিন রাইট হ্যান্ডেডদের মধ্যে। এটাই স্বাভাবিক যে তাদের রাইটহ্যান্ডের সাহায্যে সাধারণত দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম লেফটহ্যান্ডের তুলনায় বেশি করা হয়। অর্থাৎ ডানহাতিরা বামহাত নিজেদের কাজে অপেক্ষাকৃতভাবে কম ব্যবহার করে বিধায় বাম হাতে যদি রিং পড়া হয় তবে তা অক্ষত থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকবে। অনুরুপভাবে বামহাতের অন্যান্য তিনটি আঙ্গুলের তুলনায় কনিষ্ঠা এবং অনামিকা হচ্ছে সবচেয়ে কম ব্যবহৃত আঙ্গুল। সুতরাং কম ব্যবহৃত হাতের কম ব্যবহৃত আঙ্গুলটিই হচ্ছে নিঃসন্দেহে ভালবাসার উপহারটি ধারন করার সবচেয়ে সেইফ জোন।আর তাই তো ভালবাসার মানুষটির বাঁহাতে অনামিকায় শোভা পায় ভালবাসার উপহার!ছবির প্রাপ্তি স্বীকার – রেহনুমা অন্তিকা
No comments